সর্বকালের শ্রেষ্ঠ জ্যোতির র্বিজ্ঞানীদের অন্যতম টাইকো ব্রাহে Tycho Brahe is one of the greatest astronomers of all time

ডেনমার্কের ছোট্ট শহর এলসিনো,এই শহরেই জন্মেছিলেন বিজ্ঞানের এক মহান প্রতিভা টাইকো ব্রাহে!জন্ম হয়েছিল তাঁর ১৫৪৬ খ্রিস্টাব্দে ডেনমার্কের এক জমিদার বংশে।

সর্বকালের শ্রেষ্ঠ জ্যোতির র্বিজ্ঞানীদের অন্যতম  টাইকো ব্রাহে

 

-:- জন্ম : ১৫৪৬ খ্রিস্টাব্দ -:- মৃত্যু : ১৬০১ খ্রিস্টাব্দ -:-

ডেনমার্কের ছোট্ট শহর এলসিনো,এই শহরেই জন্মেছিলেন বিজ্ঞানের এক মহান প্রতিভা টাইকো ব্রাহে!জন্ম হয়েছিল তাঁর ১৫৪৬ খ্রিস্টাব্দে ডেনমার্কের এক জমিদার বংশে। তাঁর আসল নাম ছিল টাইজি। ছোটোবেলার দিনগুলি কেটে গিয়েছিল নিঃসন্তান এক কাকার কাছে। কাকা ছিলেন অন্য ঘরানার মানুষ। বিলাসিত জীবনকে ঘৃণা করতেন তিনি। অভিজাত বংশের সন্তান হলে কী হবে, কাকা সবসময় চেয়েছিলেন মানুষের মতো মানুষ হয়ে সমাজের বুকে বেঁচে থাকতে। ছোট্টবেলায় কাকার কাছ থেকেই টাইকো নানা বিদ্যায় বিদ্বান হয়ে ওঠেন। বিদ্যা মানে শুধু পুঁথিগত শিক্ষা নয়। পড়াশোনার বইয়ের বাইরে যে বিরাট জগৎ আছে, যে জগতে সূর্যের আলোর ঝলকানি এবং চাঁদের জোছনা ধারা, সেই জগৎ সম্পর্কে খুঁটিনাটি জানতে হবে—এটাই ছিল কাকার সারাজীবনের উদ্দেশ্য! ভাইপোর মধ্যে তিনি এই ব্যাপারটিকে ভালোমতোই ঢুকিয়ে দিতে পেরেছিলেন। পথের বাধাকে অগ্রাহ্য করে কীভাবে নিজের গতিপথকে অব্যাহত রাখতে সেই শিক্ষাও টাইকো কাকার কাছ থেকেই পেয়েছিলেন। তাই দেখা গেল, দশ বছরের ছোট্ট তাইজি প্রকৃতির বুকে তন্ময় হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

নক্ষত্রপুঞ্জকে টাইকো ব্রাহে অবাক বিস্ময়ে লক্ষ্য করেছেন আকাশের ।জ্যোতিষ্ক মণ্ডলীর দিকে তাকিয়ে থেকেছেন । মনের ভেতর হাজার প্রশ্ন- কোন্ তারার কী গল্প, তা তাঁকে জানতেই হবে। শুনতে হবে, কৃষ্ণনক্ষত্রের রহস্য কথা।  সারা জীবন টাইকো ব্রাহে কিন্তু খালি চোখেই আকাশ দেখেছিলেন। কেন-না তখনও পর্যন্ত দুরবিন আবিষ্কৃত হয়নি। কীভাবে খালি চোখে আকাশ পর্যবেক্ষণ করে তিনি এত কথা জেনেছিলেন তা ভাবলে আমাদের অবাক হতে হয়! আজ বিজ্ঞান অনেক উন্নত হয়েছে। আজ প্রতিটি গবেষণাগারে অতি-উন্নত টেলিস্কোপ, দুরবিন বসানো হয়েছে। তা সত্ত্বেও আমরা টাইকো ব্রাহেকে অতিক্রম করতে পারছি না। এমনকি বর্তমান যুগের জ্যোতির্বিজ্ঞানীরাও এককথায় তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব মেনে নিয়েছেন।
 
 ফুলে ফুলে মৌমাছি কী করছে, তা জানতে ভারি শখ ছিল তাঁর। অবাক বিস্ময়ে তিনি প্রত্যক্ষ করতেন গোধুলির রক্তরাগ। দেখতেন, হঠাৎ কখন আকাশের পরিবেশ পাল্টে যাচ্ছে; দূর থেকে ছুটে আসছে দুষ্টু কালো মেঘের দল; ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি-সেনারা শুরু করেছে তাদের বাঁধনভাঙা তাণ্ডব! বলো না আঙ্কেল, এসব কেন হয়? সত্যি সত্যি, কোনো একটা দত্যি কি বসে আছে আকাশের অন্তরালে? সে হঠাৎ রেগে গেলে কড়কড়-কড়াত শব্দে বাজ পড়ে! আর তার চোখের জল বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ে পৃথিবীর ওপর?

সকলেই ভেবেছিলেন, ভবিষ্যতে টাইকো ব্রাহে একজন নামকরা কবি-গাইয়ে হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবেন। তাঁর কবিতা মানুষের মর্মস্থলকে ছুঁয়ে যাবে। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। স্কুলের পাঠ শেষ করে টাইকো দর্শন এবং সাহিত্য ক্লাসের ছাত্র হয়েছিলেন। ভরতি হয়েছিলেন কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়ে।
 
তিনি ভেবেছিলেন সাহিত্যিক হবেন, হয়ে যান বিজ্ঞানী। ১৫৬০ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট মাস। ডেনমার্কের কয়েকজন জ্যোতিষী আগে থেকেই বলেছেন যে কবে গ্রহণ দেখা দেবে। গ্রহণের সময়টাও তাঁরা নির্দিষ্ট করে বলে দিয়েছেন। প্রথমদিকে ব্যাপারটিকে কেউ আমল দেয়নি। কিন্তু দেখা গেল সত্যি সত্যি নির্দিষ্ট দিনে সূর্যের মুখ ঢাকা পড়ে গেল কালো চাদরে। আঁধার ঘনিয়ে এল। পাখিরা কুলায় ফিরে গেল। ঠান্ডা বাতাস বইল। এই ঘটনাটি টাইকো ব্রাহেকে ভীষণভাবে আলোড়িত করেছিল। টাইকো ব্রাহে একেবারে অভিভূত হয়ে গিয়েছিলেন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে, বিজ্ঞানই হল অবিসংবাদিত সত্য। বিজ্ঞানের মধ্যে আবেগের কোনো স্থান নেই। কষ্টকল্পনার আসন নেই। যা সত্যি, বিজ্ঞান তাকেই প্রকাশ করে। তিনি আরও বুঝতে পারলেন, গ্রহ-নক্ষত্রের গতি হিসেব করে জ্যোতিষীরা অনেক কথা বলতে পারেন। তাঁর মনে এই প্রত্যয় দৃঢ়ভাবে জন্মাল যে গ্রহ-নক্ষত্রের ওপর নজর রাখলেই আমরা বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ডের আসল রহস্য উদ্ঘাটন করতে পারব!
 
সব কাজ ফেলে রেখে তিনি টলেমির জ্যোতির্বিজ্ঞানের বই নিয়ে পড়াশোনা করতে শুরু করলেন। শুরু হল জ্যোতিষশাস্ত্রে তাঁর নির্ভীক আনাগোনা।তাঁর হাতে ষোড়শ শতকের জ্যোতির্বিজ্ঞান নতুন রূপ লাভ করল। ডেনমার্কের লিপজিগ বিশ্ববিদ্যালয় তখন জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চার অন্যতম প্রধান কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল। দেশের শ্রেষ্ঠ জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। টাইকোর অনেকদিনের ইচ্ছে, ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভরতি হবেন। মনের কথা জানিয়ে বাবাকে একখানা চিঠি দিলেন তিনি। তারপর নাম লেখালেন লিপজিগ বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিজ্ঞান ক্লাসে।
 
তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে করেই হোক, ওই তানন্ত মহাশূন্যের অজানা রহস্যকে জানতে হবে। দিনের পর দিন কেটে যেতে লাগল। বন্ধুবান্ধবরা ভাবতে লাগলেন, টাইকো ব্রাহের বোধহয় মাথা খারাপ হয়ে গেছে। কেউ তাঁর সঙ্গে বড়ো একটা কথা বলতেন না। টাইকোর দু-চোখে তখন স্বপ্নের ঘোর লেগেছে। মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি গজিয়েছে। দাড়ি কামানোর সময় পাচ্ছেন না তিনি। এলোমেলো চুলে হাত-চিরুনি চালিয়ে দিচ্ছেন। অনেকদিন স্নান পর্যন্ত করতে ভুলে যান। কেমন যেন পাগল পাগল অবস্থা।
 
টাইকো ব্রাহে বুঝতে পেরেছিলেন, এখনও বিজ্ঞানের এই শাখা সম্বন্ধে পূর্ণাঙ্গ জ্ঞান আমরা আয়ত্ত করতে পারিনি, এখনও এই বিষয়টি আমরা ভালোভাবে বুঝতে পারিনি। বেশিরভাগটাই আচ্ছন্ন হয়ে আছে কুসংস্কারের মধ্যে। মানুষ আকাশের নক্ষত্রপুঞ্জকে পর্যবেক্ষণ করে ভয়মিশ্রিত কৌতূহলের মধ্যে দিয়ে। কিন্তু তা কেন হবে? প্রকৃতি তার অপার রহস্য থরে থরে সাজিয়ে রেখেছে আমাদের চারপাশে। আমরা কেন উৎসাহী ছাত্র হয়ে সেই জগতে প্রবেশ করব না? আমরা কেন অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকব না প্রাকৃতিক ঘটনাবলির দিকে!

১৫৭২ সালের ১১ই নভেম্বর রাতে তিনি আকাশে একখানি বেশ উজ্জ্বল নক্ষত্র দেখতে পান। দীর্ঘ আঠারো মাস ধরে নিজের তৈরী যন্ত্রপাতি দিয়ে টাইকো তারাটির কৌনিক দূরত্ব, বর্ণ, আলোর তারতম্য বিস্তারিতভাবে বিশ্লেষণ করে ফেলেন। আসলে এটি ছিল নোভা অর্থাৎ সব নক্ষত্র। জ্যোতির্বিদ টাইকো সে সময় নোভা পর্যবেক্ষণ করে ‘দি নোভাস্টেলা' নামে একটি গ্রন্থ রচনা করেন।
 
জ্যোতির্বিজ্ঞানী হিসাবে টাইকো ব্রাহের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অবদান হল ইউরোপে। তিনিই প্রথম জ্যোতির্বিদ্যা বিষয়ক অনেকগুলি যন্ত্র নির্মাণ করেছিলেন। কোয়াড্রান্ট যন্ত্র ছাড়াও বানিয়েছিলেন আর্টিলারি গোলক। দূরের নক্ষত্রের সঠিক অবস্থান বোঝবার জন্য ‘এডিলেড’ যন্ত্রও তিনি আবিষ্কার করেন। বলা যেতে পারে টাইকো ব্রাহে আমাদের নৈসর্গ চেতনার একেবারে মূলে আঘাত করতে চেয়েছিলেন। বিজ্ঞানকে তিনি আরও পরিশীলিত করার কাজে আত্মনিয়োগ করলেন। এই পথে অনেক বাধা ছিল। শেষ পর্যন্ত টাইকো ব্রাহে অধিকাংশ বাধাকে অতিক্রম করতে সমর্থ হয়েছিলেন।
 
বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানীদের লেখার সঙ্গে পরিচিতি অর্জন করেছিলেন তিনি। ১৫৮৮ সালে ধূমকেতু বিষয়ক গ্রন্থ 'De Mundi Aetherii Recentioribus' প্রকাশ করেছিলেন। গবেষণা করতে করতে নিজেকে নিয়ে গিয়েছিলেন জ্ঞানের এমন এক উচ্চতম শিখরে যে, লোকে অবাক বিস্ময়ে তাঁর দিকে তাকিয়ে থাকত!
১৬০১ খ্রিস্টাব্দে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। এখনও আমরা তাঁকে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের অন্যতম বলে সম্মান জানিয়ে থাকি।

COMMENTS

নাম

Android,6,Computer,23,Internet,5,Mcq Seet,8,Mcq Test,2,Multimedia,3,Other,19,Poet,36,Police,1,Preparation,40,Quiz,2,Revolutionary,5,School,45,Scientist,4,Tet,6,Word,6,
ltr
item
Guides365: সর্বকালের শ্রেষ্ঠ জ্যোতির র্বিজ্ঞানীদের অন্যতম টাইকো ব্রাহে Tycho Brahe is one of the greatest astronomers of all time
সর্বকালের শ্রেষ্ঠ জ্যোতির র্বিজ্ঞানীদের অন্যতম টাইকো ব্রাহে Tycho Brahe is one of the greatest astronomers of all time
ডেনমার্কের ছোট্ট শহর এলসিনো,এই শহরেই জন্মেছিলেন বিজ্ঞানের এক মহান প্রতিভা টাইকো ব্রাহে!জন্ম হয়েছিল তাঁর ১৫৪৬ খ্রিস্টাব্দে ডেনমার্কের এক জমিদার বংশে।
https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEicxeQApsQcPQIMlG9NSQZt5Mkc1Hrh0flN3Yb532VmmU4qSVrqyUBwhKLEmzy60XXWU-amnCUZr7fnBYZP6ZLXMZrCu99rNtBpWxiQwh0pAY8t_qFyACsHWGKi_Pc-HQ6wCYeeOUUSXlfCY_MvJlpjG6DhX9N6qbna9LGa4v6Dnlvq3pMfUU1lcsoQ/w178-h200/aaa.jpg
https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEicxeQApsQcPQIMlG9NSQZt5Mkc1Hrh0flN3Yb532VmmU4qSVrqyUBwhKLEmzy60XXWU-amnCUZr7fnBYZP6ZLXMZrCu99rNtBpWxiQwh0pAY8t_qFyACsHWGKi_Pc-HQ6wCYeeOUUSXlfCY_MvJlpjG6DhX9N6qbna9LGa4v6Dnlvq3pMfUU1lcsoQ/s72-w178-c-h200/aaa.jpg
Guides365
https://www.guides365.in/2022/03/Tycho%20Brahe.html
https://www.guides365.in/
https://www.guides365.in/
https://www.guides365.in/2022/03/Tycho%20Brahe.html
true
1642768254594531261
UTF-8
Loaded All Posts Not found any posts VIEW ALL Readmore Reply Cancel reply Delete By Home PAGES POSTS View All RECOMMENDED FOR YOU LABEL ARCHIVE SEARCH ALL POSTS Not found any post match with your request Back Home Sunday Monday Tuesday Wednesday Thursday Friday Saturday Sun Mon Tue Wed Thu Fri Sat January February March April May June July August September October November December Jan Feb Mar Apr May Jun Jul Aug Sep Oct Nov Dec just now 1 minute ago $$1$$ minutes ago 1 hour ago $$1$$ hours ago Yesterday $$1$$ days ago $$1$$ weeks ago more than 5 weeks ago Followers Follow THIS PREMIUM CONTENT IS LOCKED STEP 1: Share to a social network STEP 2: Click the link on your social network Copy All Code Select All Code All codes were copied to your clipboard Can not copy the codes / texts, please press [CTRL]+[C] (or CMD+C with Mac) to copy